ডেলিভারি পেইন উঠানোর উপায়
গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়ডেলিভারি পেইন উঠানোর উপায় কি? এ প্রশ্নটি অনেক গর্ভবতী মহিলারা করে থাকেন।
আপনারা কি জানেন ডেলিভারি পেইন কেন উঠাতে হয়? কোন কোন গর্ভবতী মহিলারা
ডেলিভারি পেইন উঠাতে পারবেন? এবং ডেলিভারি পেইন উঠানোর ফলে কোন ধরনের সমস্যার
সম্মুখীন হতে হয় এ সকল বিষয় নিয়ে আমাদের এই পোস্টটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা
করব।
আমরা জানি গর্ভাবস্থার সময় কাল নয় মাস তথা ৪০ সপ্তাহ। এই নয় মাস বা ৪০
সপ্তাহের পরে সাধারণভাবে গর্বের পেইন ওঠার কথা। যদি কোন কারণবশত এ ধরনের ব্যাথা
না উঠে তাহলে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে ডেলিভারি পেইন উঠানো সম্ভব। কিন্তু
অনেকেই জানেন না কিভাবে এই ডেলিভারি পেইন উঠাতে হয়। চলুন জেনে
নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ ডেলিভারি পেইন উঠানোর উপায়
- ডেলিভারি পেইন উঠানোর উপায়
- ডেলিভারি পেইন উঠানোর দোয়া
- ডেলিভারি পেইন এর লক্ষণ
- ডেলিভারি পেইন না উঠার কারণ
- নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য করণীয়
- নরমাল ডেলিভারি কত দিনে হয়
-
শেষ মন্তব্যঃ ডেলিভারি পেইন উঠানোর উপায়
ডেলিভারি পেইন উঠানোর উপায়
ডেলিভারি পেইন উঠানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
গর্ভাবস্থায় কোন মহিলার গর্ভাবস্থার বয়স যদি নয় মাস হয়ে যায় এবং তারপরও
তার ডেলিভারি পেইন না ওঠে তাহলে সে যে পদ্ধতি ব্যবহার করে ডেলিভারি পেন উঠায়
তার নাম হলো ইন্ডাকশন। এ পদ্ধতি অবলম্বন করার প্রধান কারণ হলো নরমালে বাচ্চা
প্রসব করা। সাধারণত কোনো কারণ ছাড়া ইন্ডাকশন করানোর কোন প্রয়োজন হয় না। যদি
স্বাভাবিক সময় থেকে ব্যথা উঠতে অপেক্ষার থেকে বেশি সময় লাগে তাহলে শুধুমাত্র
এ পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস
অনেকগুলো কারণ এর জন্যই ইন্ডাকশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যদি আপনার
পেটের পানি শুকিয়ে যায় কিন্তু পেইন না উঠে সেই ক্ষেত্রে ইন্ডাকশন পদ্ধতি
ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়াও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যদি জানা যায় গর্ভের
মধ্যে প্লাসেন্টা ঠিকমতো কাজ করছে না এবং এমনিউটিক ফ্লুইড এর পরিমাণ একদম
কমে গেছে তাহলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তাছাড়াও গর্ভবতী মহিলা যদি
কোন রোগে আক্রান্ত থাকে যেমন ডায়াবেটিস রক্তচাপসহ ইত্যাদি তাহলেও এ পদ্ধতি
ব্যবহার করা হয়।
ডেলিভারি পেইন উঠানোর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো সুইপিং করা। আরো একটি পদ্ধতি
হচ্ছে ডাক্তার স্যালাইনের সাথে এক ধরনের হরমোন দিতে পারে যাতে ব্যথা কমতে
সহায়তা করে। এছাড়াও পেন উঠানোর আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে ধীরে ধীরে হাটাহাটি
করা অর্থাৎ স্থানের পরিবর্তন করা। তাছাড়া যদি আপনি অল্প অল্প করে পানি পান
করেন তাহলেও আপনার ডেলিভারি পেইন ওঠার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়াও আপনি পেটে বা
পিঠে গরম তেল দিয়ে হালকা মালিশ করতে পারেন। আশা করি ডেলিভারি পেইন
উঠানোর উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
ডেলিভারি পেইন উঠানোর দোয়া
ডেলিভারি পেইন উঠানোর দোয়া কি তা সম্পর্কে অনেক গর্ভবতী মহিলারাই জানার আগ্রহ
প্রকাশ করে থাকেন। অনেক গর্ভবতী মহিলারাই জানেন না কোন দোয়া আমল করলে
ডেলিভারির সময় আল্লাহ তাআলা তাকে সাহায্য করেন। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক
ডেলিভারি পেইন উঠানোর দোয়া কি।ডেলিভারি বা প্রসব বেদনার সময় মানসিক শান্তি ও
আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য কিছু বিশেষ দোয়া পড়া যায়। এগুলো মানসিকভাবে
প্রশান্তি এনে দেয় এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে সাহায্য করে।
ডেলিভারি পেইন উঠানোর জন্য সূরা মাযহার ৭ নাম্বার আয়াতটি তেলাওয়াত করতে
পারেন। তাছাড়াও সূরা মারিয়াম এর কিছু আয়াত তেলাওয়াত করতে পারেন। সূরা আলে
ইমরানের ১৭৩ নাম্বার আয়াত তেলাওয়াত করতে পারেন। এমনকি যে কোন কষ্টের
সময় লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনাজ জোয়াল লেমিন এই
দোয়াটি পাঠ করতে পারেন। এ দোয়া গুলো আমল করার ফলে আল্লাহ আপনাকে খুব দ্রুত
সাহায্য করবেন ইনশাল্লাহ।
ডেলিভারি পেইন এর লক্ষণ
ডেলিভারি পেইন এর লক্ষণ কি এ প্রশ্নটি সকল গর্ভবতী মায়েরা করে থাকেন।
অনেক সময় তাদের গর্ভে ব্যথা উঠলেও তারা বুঝতে পারেন না যে এটা কি তাদের বাচ্চা
প্রসব হওয়ার সময় হয়ে গেছে তাই জন্য ঘটে নাকি এমনিতেই ঘটে। না জানার কারণে
অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাই আমাদের এই পোস্টটিতে ডেলিভারি পেইনের
লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। ডেলিভারি পেইন এর প্রধান লক্ষণ
হল ব্যথা কোমর থেকে শুরু হয়ে তলপেটে এসে থামে।
আরো পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন
আবার অনেক সময় কোমরে ব্যথা শুরু হয়ে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ব্যথা চলে যায়।
আবার ব্যথা উঠা থেকে শুরু করে ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত যে ব্যথাটি থাকে তা হল
ডেলিভারি পেইন এর লক্ষণ। আবার যে ব্যথাটি অনেক তীব্র হয় সেটাও কিন্তু ডেলিভারি
ব্যথার লক্ষণ। সাধারণত এই বিষয়গুলোকে ডেলিভারি ব্যথার লক্ষণ হিসেবে ধরা
হয়ে থাকে। আশা করি আমাদের এই আলোচনার মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন ডেলিভারি
পেইনের লক্ষণ গুলো কি।
ডেলিভারি পেইন না উঠার কারণ
ডেলিভারি পেইন না উঠার কারণ গুলো কি জেনে নিন। সাধারণত ৪০ থেকে ৪২ সপ্তাহের
মধ্যে গর্ভবতী মহিলার ডেলিভারি পেইন উঠে থাকে। তবে ৪০ সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ার
পরেও যদি ডেলিভারি পেইন না উঠে থাকে তাহলে তা কয়েকটি কারণের জন্য
হতে পারে। আপনারা হয়তো অনেকেই ডেলিভারি পেইন ওঠার কারণ সম্পর্কে জানেন
কিন্তু এটা জানেন না যে ডেলিভারি পেইন না ওঠার কারণ কি। যদি চল্লিশ সপ্তাহে
মায়ের এমিউনিটি তরল কমে যায় তাহলে ডেলিভারি পেইন ওঠেনা।
যদি বাচ্চার মাথা নিচের দিকে না থেকে উপরের দিকে বা অন্য সাইডে থেকে থাকে তাহলে
ডেলিভারি পেইন ওঠেনা। আবার যদি গর্ভবতী মহিলার বয়স অনেক কম বা অনেক বেশি হয়ে
থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রেও ডেলিভারি পেইন না ওঠার কারণ হয়ে থাকতে পারে। আবার
যারা প্রথমবার মা হয় তাদের ডেলিভারি পেইন একটু দেরিতে হয়ে থাকে। আমার
গর্ভে থাকা শিশু যদি অসুস্থ হয় সেক্ষেত্রেও ডেলিভারি পেইন ওঠার সম্ভাবনা
অনেকটাই কম।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য করনীয়
নরমাল ডেলিভারির জন্য গর্ভবতী মহিলার মানসিক প্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই।
এছাড়াও নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য তাকে কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে তা হল
তাকে নিয়মিত কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাটাহাটি করতে হবে। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য
নিয়মিত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে অর্থাৎ প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা
নিয়মিত ঘুমাতে হবে।
নিয়মিত ডাক্তারে পরামর্শে চলাফেরা করতে হবে। শারীরিক ভঙ্গি ঠিক রাখতে হবে।
শরীরের উপযুক্ত ওজন ধরে রাখতে হবে। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য
গর্ভাবস্থার বয়সকাল ৩৬ সপ্তাহের পর থেকে শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে
রাখতে হবে। প্রতিদিন ব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে হবে। শরীরের উপরে
খেয়াল রাখতে হবে এই পদক্ষেপ গুলো অবলম্বন করলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা
অনেকটা বেড়ে যায়।
নরমাল ডেলিভারি কত দিনে হয়
নরমাল ডেলিভারি কতদিন হয় এ প্রশ্নটি সকল গর্ভবতী মায়েরায় করে থাকেন। তাদের
এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব সাধার মতো ৩৭ সপ্তাহ থেকে ৪২ সপ্তাহ এর মধ্যে নরমাল
ডেলিভারি হয়ে থাকে। এই পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে শিশু যেকোনো সময়ে জন্ম নিতে পারে।
আর যে শিশু ৩৭ সপ্তাহের আগেই জন্মগ্রহণ করে তাকে প্রিম্যাচিউর শিশু বলা হয়ে
থাকে। এ সময় শিশুকে অনেক পরিচর্যায় রাখতে হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় যদি ৪২
সপ্তাহ এর বেশি স্থায়ী হয় তাহলে তাকে দীর্ঘস্থায়ী গর্ভাবস্থা বলা হয়ে
থাকে।
দীর্ঘস্থায়ী গর্ভাবস্থা হয়ে থাকলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে তাই যত
দ্রুত পারবেন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। ডাক্তার হয়তো বা আপনাকে বাচ্চা
প্রসব হওয়ার আগাম সম্ভাব্য একটি তারিখ বলে দিয়েছেন কিন্তু মনে রাখবেন কেবল
শুধুমাত্র শতকরা চার শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে এই ধারণাটি সঠিক হয়ে থাকে। বেশিরভাগ
শিশুই ৩৭ সপ্তাহ থেকে ৪১ সপ্তাহের মধ্যেই জন্মগ্রহণ করে থাকে। আর যদি মায়ের
গর্ভে যেমন শিশু অথবা আগের অধিক শিশু থাকে তাহলে ৩৭ সপ্তাহের আগে তা প্রসব হয়ে
যায়।
শিশু যখন গর্ভে আসে ইমপ্ল্যান্টেশনে কত সময় লেগেছে তার ওপর ও কিন্তু ডেলিভারির
সময়কাল নির্ভর করে। নিষিদ্ধ ডিম্বাণু যদি সময় নিয়ে ইমপ্ল্যান্ট হয়ে থাকে
তাহলে গর্ভাবস্থায়ও বেশি সময় ধরে হয়ে থাকে। সাধারণত যারা আগেও গর্ভধারণ
করেছেন পরবর্তীতে তাদের গর্ভাবস্থার সময়কার বা বাচ্চা হওয়ার সময় কাল কিছুটা
কম লাগতে পারে। আর যারা প্রথমবার গর্ভধারণ করেন তাদের সময়কাল কিছুটা কম
বেশি হয়ে থাকে।
শেষ মন্তব্যঃ ডেলিভারি পেইন উঠানোর উপায়
ডেলিভারি পেইন উঠানোর উপায় সম্পর্কে আমাদের এই পোস্টটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা
করার চেষ্টা করেছি। আপনার ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন কিভাবে ডেলিভারি পেইন
উঠানো যায়। সাধারণত ৪০ সপ্তাহ এরপর থেকে ডেলিভারি পেইন উঠে থাকে। আর এই
সময়ের পার হওয়ার পরেও যদি আপনার ডেলিভারি পেইন না উঠে থাকে তাহলে অবশ্যই
আপনাকে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই আপনাদেরকে পদ্ধতি গুলো
সম্পর্কে জানিয়েছি। প্রিয় পাঠক আমাদের এই পোষ্টের মধ্যে কোথাও যদি ভুল ত্রুটি
দেখতে পান তাহলে অবশ্যই তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর অবশ্যই বিষয়টি আমাদেরকে অবগত করবেন আমরা অবশ্যই তা পরবর্তীতে সংশোধন করার
চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। পরিশেষে আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে
থাকে তাহলে অবশ্যই পোস্টের নিচে একটি মন্তব্য করতে ভুলবেন না। আর আমাদের
পোষ্টের জন্য আপনার যদি কোন পরামর্শমূলক মন্তব্য থাকে তাহলে অবশ্যই সেটি
আমাদেরকে জানাবেন। আর প্রতিদিনের এরকম নিত্য নতুন তথ্যবহুল কন্টেন্ট পড়ার জন্য
আমাদের এই ওয়েবসাইটটিকে নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
ড্রিমস ব্লগারেরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url